মোসাঃ ফারজানা বিনতে ওহাব
ভাইস চেয়ারম্যান
বাবুগঞ্জ উপজেলা,বরিশাল।
দেশে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম পর্যায় হলো প্রাথমিক শিক্ষা। শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা অর্জিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ৬ বছর বয়স থেকে। সাধারণত ৬-১০ বছর বয়সী শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষায় যুক্ত থাকে। ১৯৫২ সালের আগে প্রাথমিক শিক্ষা ছিল চার বছর মেয়াদী প্রথম
শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত । ১৯৫২ সাল থেকে এই মেয়াদকে এক বছর বাড়িয়ে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদী করা হয়েছে এবং এই মেয়াদ এখন পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে । শিক্ষা বছর শুরু হয় জানুয়ারী মাসে এবং শেষ হয় ডিসেম্বর মাসে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো দুই শিফটে চলে। ১ম শিফ্ট (শুরু হয়) সকাল ১০টা থেকে ১২টা এবং ২য় শিফট দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪:১৫ টা পর্যন্ত। ১ম শিফটে পড়ানো হয় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রদের এবং ২য় শিফটে পড়ানো হয় তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। উভয় শিফটে একই শিক্ষকগণ পড়িয়ে থাকেন।
পাঠক্রমঃ
দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর জন্য রয়েছে বাংলা, পাটিগণিত এবং পরিবেশ বিজ্ঞান (সাধারণ বিজ্ঞান, সমাজ বিদ্যা)। তৃতীয় শ্রেণী থেকে পরবর্তী শ্রেণীসমূহের ছাত্র/ছাত্রীদের শারীরিক শিক্ষা, কারিগরি শিল্প, সঙ্গীত, ধর্মীয় শিক্ষা এবং দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইংরেজী শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
পরীক্ষা পদ্ধতিঃ
প্রাথমিক শিক্ষার পরবর্তী মাধ্যমিক স্তরে উন্নয়নের সুযোগ দেয়া হয় বছর শেষে অনুষ্ঠিত বার্ষিক পরীক্ষার সন্তোষজনক ফলাফলের উপর নির্ভর করে। এখানে পঞ্চম শ্রেণী থেকেও কোন সরকারী পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা নাই। বিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের প্রধান সফলভাবে উত্তীর্ণ ছাত্র/ছাত্রীদেরকে এ পর্যায়ের সনদ প্রদান করে থাকেন। তবে পঞ্চম শ্রেণী শেষে শ্রেষ্ঠ ছাত্রদেরকে বাছাই করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মেধা ভিত্তিক বৃত্তি প্রদানের জন্য উপজেলা/থানা ভিত্তিক একটি পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকেন।
প্রশাসনিক তদারকিঃ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দায়িত্ব পালন করে থাকে। বাংলাদেশকে আটটি বিভাগে, ৬৪টি জেলায় এবং ৪৯০টি উপজেলা বা থানায় ভাগ করা হয়েছে। এই ছয়টি বিভাগীয় প্রধান কার্যালয়ে একজন করে উপ-পরিচালক রয়েছেন, জেলা পর্যায়ে রয়েছেন ৬৪ জন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং উপজেলা বা থানা পর্যায়ে রয়েছেন ৪৯০ জন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা যারা স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্যবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
মূল্যায়নঃ
শিক্ষার্থীর সামগ্রিক বিকাশের ও প্রকৃতির সঠিক পরিমাপ করাকেই বলা হয় মূল্যায়ন। জীবনভিত্তিক শিক্ষার সঙ্গে তার অগ্রগতির ধারা কতখানি সামঞ্জস্যপূর্ণ তারও সম্যক ধারণা লাভ করা যায় মূল্যায়নের মাধ্যমে। মোট কথা মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর সামগ্রিক সত্ত্বার পরিমাণ নির্ধারণে নির্ভরযোগ্য উপায় ।
শিক্ষা ব্যবস্থাপনাঃ
প্রত্যেক উপজেলায়/থানায় প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনার জন্য উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত একটি শিক্ষা কমিটি দায়িত্ব পালন করে থাকে। দেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিমাণ প্রায় ৬৫ হাজার। প্রাথমিক শিক্ষার প্রায় সবটাই অবৈতনিক। সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে সার্বজনীন করে তোলার জন্য যথেষ্ট উৎসাহ প্রদান করছে। ১৯৭৩ সাল থেকে ৬-১০ বছর বয়সী সকল শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক এই মর্মে জাতীয় সংসদ থেকে আইন পাশ করা হয়েছে।
সমকক্ষ শিক্ষা পদ্ধতিঃ
প্রচলিত ধারার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার বয়সী শিশুদের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাও চালু রয়েছে। এই পর্যায়ের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ইবতেদায়ী মাদ্রাসা নামে পরিচিত। দেশে এই ধরনের প্রায় ১৬ হাজার মাদ্রাসা চালু আছে। এই মাদ্রাসাগুলি একেকটি স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান এবং এই মাদ্রাসা শিক্ষায় ৫ বছরের কোর্স চালু রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য মাদ্রাসা যেমনঃ দাখিল, আলীম, ফাজিল, কামিল পর্যায়ের মাদ্রাসাগুলোতেও ইবতেদায়ী কোর্স চালু রয়েছে। এ সকল মাদ্রাসাগুলোতে বাংলা, অংক, ইংরেজী, বিজ্ঞান ইত্যাদির পাশাপাশি বিশেষ করে কুরআন,হাদিস, আরবী ইত্যাদি শেখানো হয়।
শিশুদের বিদ্যালয় পরিত্যাগের কারণঃ
নানা কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ত্যাগ করে থাকে।যার মধ্য উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ ১. প্রতিকূল পারিবারিক পরিবেশ।
২. প্রদত্ত শিক্ষা শিক্ষার্থীর কাছে আকর্ষণীয় মনে হয় না। ৩. অকার্যকর ও সঙ্গতিহীন শিক্ষাসূচী ।
৪. দরিদ্রতা।
৫. ১ম ও ২য় শ্রেণীতে অধিকতর ভিড় এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষকের ৬. মেয়েদের বিদ্যালয়ে প্রেরণের ক্ষেত্রে সামাজিক কুসংস্কার।
৭. ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা পদ্ধতি ।
৮. শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকগণ সহানুভূতিশীল নয়।
৯. উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব।
১০. দায়িত্বশীল শিক্ষকের অভাব।
১১. সুযোগ সুবিধা ও শিক্ষা উপকরণের অভাব ।
১২. মৌসুমী কাজের চাপ।
১৩, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।
১৪. অভিভাবকের উদাসিনতা
১৫. বইপত্র ও জামা-কাপড়ের অভাব।
১৬. শিক্ষা শেষে কর্মের নিশ্চয়তার অভাব।
১৭. উপার্জনের উপায় হিসাবে শিক্ষার গুরুত্ব কমে যাওয়া।
১৮. বিদ্যালয়ের সুসমবন্টনের অভাব।
১৯. প্রাক প্রাথমিক স্তরে প্রস্তুতিমূলক শিক্ষার অভাব।
২০. সর্বোপরি শিশুদের সুষ্ঠু পরিচালনায় পিতামাতা ও অভিভাবকদের ব্যর্থতা।
বিশেষতঃ উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশে এই প্রবণতা অধিক মাত্রায় লক্ষণীয়। আর এ সমস্ত দেশে বিদ্যালয় পরিত্যাগকারী ছাত্রসংখ্যার পরিমাণও বেশী হতে দেখা যায়। বাংলাদেশেও অনুরূপ অবস্থা বিরাজমান। আমাদের দেশের শিশুদের সাধারনত বিদ্যালয় পরিত্যাগ করে ১ম শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উঠার সময়। ২য় শ্রেণী থেকে ৩য় শ্রেণীতে উঠার সময় ৩য় শ্রেণী থেকে ৪র্থ শ্রেণীতে উঠার সময়। ৪র্থ শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণীতে উঠার সময়।
এছাড়াও ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেনীতে যেতে যেতে শতকরা ৭৫ জন শিক্ষার্থীই বিদ্যালয় পরিত্যাগ করে চলে যায়। শতকরা মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা লাভ করতে সক্ষম হয়। অসময়ে এই বিদ্যালয় পরিত্যাগের পেছনে যে কারণগুলো অধিক সক্রিয় তা একটু চিন্তা করলেই দেখা যায় যে, এগুলো অস্বীকার করার কোন উপায় নাই।
বিদ্যালয় পরিত্যাগ বন্ধের উপায়ঃ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশেষ করে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখার পাশাপাশি শিক্ষার মান উন্নয়ন ও অপচয়রোধ কল্পে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে পালন করলে অদূর ভবিষ্যতে আমরা অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখতে পারব বলে বিশ্বাস করি।
১. বিদ্যালয়ের পরিবেশকে আরও আনন্দঘন করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় বিদ্যালয়ে আসতে চায়
২. আধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষা দান ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা ৩. প্রতিটি শ্রেণীতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা। ৪. প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অভিজ্ঞ শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগদান
৫. শিক্ষার গুরুত্ব ও মূল্য সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার চালানো।
৬. শিক্ষার্থীদের বয়স, সামর্থ্য ও অভিরুচির প্রতি লক্ষ্য রেখে পাঠ্য পুস্তক প্রণয়ন
৭. দরিদ্রদের জন্য প্রয়োজনীয় অনুদানের ব্যবস্থা রাখা।
৮. প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা
৯. সম্ভাব্য ক্ষেত্রে শিক্ষার সাথে সাথে রোজগারের ব্যবস্থা করন ১০. নৈশ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা রাখা
১১. মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সামাজিক বাধা দূর করা
১২. শিক্ষকদের আদর-যত্ন, মায়া-মমতা ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনে নিরাপত্তা বোধ জাগ্রত করা। ১৩. স্থানীয় অবস্থার উপযোগী বিদ্যালয়ের সময় নির্ধারণ ও বিদ্যালয় বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করা।
১৪. প্রাক প্রাথমিক ও বয়স্ক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার ঘটানো
১৫. বিদ্যালয়ের সুষম বন্টন।
এছাড়াও সময় উপযোগী বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিদ্যালয় পরিত্যাগের হার অবশ্যই কমানো সম্ভব।
বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাঃ
জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন-১৯৯০ অনুযায়ী বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ১৯৯২ সালের ১লা জানুয়ারী থেকে কার্যকরী করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ৬৮টি উপজেলা/থানায় এই কার্যক্রম শুরু করা হয় এবং পরবর্তীতে অন্যান্য থানাতেও তা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
২০১০ সাল থেকে সীমিত আকারে এবং ২০১৩ সাল থেকে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ বছরের বেশি বয়সি শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়। কিন্তু সরকারিভাবে বাংলাদেশে দুই বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক ক্লাস চালু না থাকায় বেসরকারি উদ্যোগে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রসার ঘটছে।
প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ক্লাসরুম উপযোগী করে তুলতে সারাদেশে নতুন করে আরো ৩০ হাজার ‘শিশু উপযোগী শ্রেণিকক্ষ’ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রাক-প্রাথমিকের জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে শিশুদের বয়স উপযোগী কারিকুলামও প্রণয়ন করা হচ্ছে।
প্রাক-প্রাথমিক এক বছরের পরিবর্তে দুই বছর করার জন্য নীতিগত অনুমোদন চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সারসংক্ষেপে প্রাক-প্রাথমিক দুই বছরের করার যৌক্তিকতা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়।
জানাগেছে , বর্তমানে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৪ হাজার ৭৯৯টি বিদ্যালয়ে শুধু প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য নির্ধারিত শ্রেণিকক্ষ আছে এবং ৩৭ হাজার ৬৭২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক জন করে সহকারী শিক্ষক (প্রাক-প্রাথমিক) কর্মরত আছেন। এছাড়া, আরো ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য এক জন করে সহকারী শিক্ষকের (প্রাক-প্রাথমিক) পদ সৃজন করা হয়েছে এবং শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। পাশাপাশি প্রতিটি বিদ্যালয়ে চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের কাজ চলমান।
বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যঃ
৬ থেকে ৭ বছর বয়সী প্রত্যেক শিশুকে বাধ্যতামূলক ভাবে বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা। তবে এই বিধান শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিক এবং বিদ্যালয় থেকে দুই কিলোমিটারের অধিক দূরত্বে বসবাসকারী শিশুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যে সকল শিশুরা নির্দিষ্ট উপজেলার বিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হবে তাদের প্রত্যেককে ৫ বছরের শিক্ষাক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
• এই আইন বলবৎ করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভার চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। চারজন মনোনীত শিক্ষাবিদ, তার মধ্যে ২ জন পুরুষ ২ জন মহিলা। প্রধান শিক্ষক কমিটির সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
• প্রত্যেক উপজেলা/পৌরসভার অভ্যন্তরে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা পরিবীক্ষণ উন্নয়নের জন্য এবং কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি মাসিক সভার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সুপারিশ ও তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় সংসদে পেশ করে থাকে ।
এ ছাড়া আরও কিছু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করে থাকে :
১. বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যান্টস্ কমিশন : এই প্রতিষ্ঠান সরকারী অনুদান বিভিন্ন
বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বন্টনের ব্যবস্থা করে থাকে।
২. জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় : দেশের স্নাতক কলেজগুলোর শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে গঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে।
৩. নয়টি শিক্ষা বোর্ড:
তাদের অধীনস্থ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ করে থাকে ।
৪. মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড: মাদ্রাসাগুলোর পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ করে থাকে।
৫. কারিগরী শিক্ষা বোর্ড: কারিগরী শিক্ষা পরিচালনা পরীক্ষা গ্রহণ ও সনদ
বিতরণ করে থাকে।
৬. বিআইটি: অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা গ্রহণ করে এবং ফলাফল প্রকাশ করে থাকে।
প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর আধুনিকায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নানা উদ্যোগঃ
গনতন্ত্রের মানসকন্যা, তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষাকে আধুনিকায়নে সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হচ্ছে:
শিশুদের সরকার কতৃক বাৎসরিক সহায়তাঃ
প্রতি বছর প্রত্যেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।আবার যাদের শিক্ষার্থী ১৫০ জন এর উপরে থাকে তারা পায় ৭০ হাজার টাকা। যে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ১৮০ জনের উপরে তারা পায় ৮০ হাজার টাকা।
এছাড়াও প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা উপকরন দেয়া হয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামত বাবদ সরকারের বরাদ্দঃ সরকার প্রতি বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মান বাবদ বরাদ্দ দিয়ে থাকে। সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ ২ লাখ টাকা প্রদান করে এবং
বৃহৎ মেরামত বাবদ ৭ লাখ টাকা বা তার উর্ধ্বে বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এছাড়াও প্রতি তিন বছর পর পর রুটিন মেইনটেনেন্স বাবদ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় সঠিকভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সহ সরকারী উদ্যোগে মাস্ক ও বিভিন্ন ধরনের স্বাস্হ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরন করা হয়েছে।
তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে উদ্যোগঃ
প্রতিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর এর সাথে সাথে ওয়াই ফাই সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসবের সুষ্ঠু ব্যবহার হলে অজপাড়া গ্রামের গরীব অসহায় শিক্ষার্থীরা তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞানে আরো সমৃদ্ধ হবে।
ডিজিটাল হাজিরাঃ
সরকার প্রতিটি বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা নিয়েছে। এর সঠিক ব্যবহার হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে শৃংখলা ও সময়ানুবর্তি পরিপালনের মাধ্যমে শিক্ষার মানকে উন্নত করা আরও সহজ হবে।
সুপারিশ মালাঃ
* প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সংকট দূর করতে সরকারকে কারযকরী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
* বিদ্যালয় গুলোতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মনিটরিং আরো বাড়াতে হবে।
* শিক্ষার্থীরা যাতে ঝরে না পড়ে সে জন্য শিক্ষকদের আরো সচেতন হতে হবে।প্রয়োজনে তাদের অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
* শিক্ষকদের সচেতনতা ও আন্তরিকতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট আরো সচেষ্ঠ হতে হবে।
* শিশুদের নিজের সন্তানের মত মনে করে তাদের আদর সোহাগ ও ভালবাসা দিয়ে শিক্ষা দিতে হবে।
* শিশুদের জন্য সরকার কতৃক বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যাবহার করতে হবে।
* বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সরকারের আর্থিক বরাদ্দের সুষ্ঠু ব্যাবহার নিশ্চিত করতে হবে।
* ডিজিটাল হাজিরা, বিদ্যালয়ের ওয়াই ফাই সুবিধা ও প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিশুদের আধুনিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকদের আরো আন্তরিক হতে হবে।
এছাড়াও, সরকারের পক্ষ থেকে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর আধুনিকায়ন ও শিক্ষার মান বাড়াতে যে সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সে সকল পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আর কোন কিছুর সংকট থাকবেনা, পাশাপাশি শিক্ষার মান আরো উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।