বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং, সন্ধ্যা ৭:৪৬
শিরোনাম :
আরেকবার ভুল করলে ইসরায়েলের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না: ইরান ২ মাসের মধ্যে বেনজীরের দুর্নীতির প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ তাপমাত্রা আরও বাড়বে, গরম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের পদত্যাগ বান্দরবানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলি, কেএনএফ সদস্য নিহত সনদ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী গ্রেপ্তার সারাদেশে ১০ দিনে পাঁচ লাখ গাছ লাগাবে ছাত্রলীগ ইসরায়েল, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রে বিল পাস চট্টগ্রামে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত বাংলাদেশকে বন্যা নিয়ন্ত্রণে ৭১ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে এডিবি

পটুয়াখালীর সড়কের ছবি কাশ্মিরের বলে চালানোর পর বিব্রত ভারত

অনলাইন ডেস্ক  বাংলাদেশের পটুয়াখালী শহরের ঝাউতলা এলাকার ছবি। আর ভারতের জম্মু ও কাশ্মির প্রশাসন সেটাকেই কিনা দাবি করে বসলো শ্রীনগরের বুলেভার্ড রোড বলে।

এই মারাত্মক ভুলটা ধরা পড়ার পর তড়িঘড়ি সব পোস্ট ডিলিট করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু শ্রীনগরে যখন জি-টোয়েন্টির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক চলছে তখন এই ছবি-বিভ্রাটকে ঘিরে প্রবল অস্বস্তি কিন্তু এড়ানো যাচ্ছে না!

বিপত্তির সূত্রপাত গত ১৮ মে, বৃহস্পতিবার। সেদিন জম্মু ও কাশ্মিরের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগ তাদের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডল থেকে একটি আলোকসজ্জিত রাস্তার ছবি টুইট করে লেখে, ‘শ্রীনগরের বুলেভার্ড রোডকে অসাধারণ সজ্জায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। কাশ্মিরে জি-টোয়েন্টির বৈঠকে যোগ দিতে সারা পৃথিবী থেকে যে প্রতিনিধিরা আসছেন তাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি সম্পন্ন।’

অবিকল একই ভাষায় সে দিন একই রকম টুইট করে কাশ্মিরের বাডগাম জেলার তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগও। তারপর একে একে সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কাশ্মিরের ‘সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার’রাও সেই একই ছবি ভাষার একটু অদল-বদল করে পোস্ট করতে থাকেন। সেই পোস্ট ঢালাও রিটুইট করার জন্যও আবেদন জানানো হতে থাকে।

কথিত সেই ‘বুলেভার্ড রোডে’র ছবি আরও যারা পোস্ট করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন ‘সেভ ইয়ুথ সেভ ফিউচার’ নামে একটি এনজিও’র কর্ণধার ওয়াজাহাত ফারুক ভাট, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার আকিব মীর প্রমুখ।

ওয়াজাহাত ফারুক ভাট সেই সঙ্গেই লেখেন, ‘বুলেভার্ড রোড থেকে যেন আজ সৌন্দর্যের দীপ্তি ফুটে বেরোচ্ছে, যা একটি অসাধারণ ইভেন্টের আয়োজনে আমাদের অঙ্গীকারের পরিচায়ক।’

কাশ্মিরের শ্রীনগরে জি-টোয়েন্টি জোটের পর্যটন ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক আয়োজনের মাধ্যমে ভারত সারা দুনিয়াকে এই বার্তাই দিতে চাইছে যে কাশ্মিরের পরিস্থিতি এখন এতটাই স্বাভাবিক যে সেখানে আন্তর্জাতিক স্তরের একটি বৈঠকও আয়োজন করা সম্ভব। শ্রীনগর তথা কাশ্মির যে কোনও বিতর্কিত ভূখণ্ড নয়– বরং ভারতেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং জি-টোয়েন্টির বর্তমান চেয়ার হিসেবে সেখানে জোটের কোনও বৈঠক আয়োজন করার পূর্ণ অধিকার ভারতের আছে, বলতে চাওয়া হচ্ছে এই কথাটাও।

কথিত ‘বুলেভার্ড রোডে’র ছবির ঢালাও পোস্ট যে সেই ক্যাম্পেইনেরই অংশ ছিল তা বুঝতে কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু ভারতেরই কয়েকটি ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট কিছুক্ষণের মধ্যেই আবিষ্কার করে ফেলে শ্রীনগরের একটি অভিজাত রাজপথ বলে প্রশাসন যার ছবি তুলে ধরছে সেটি আসলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত পটুয়াখালীর একটি সাজানো-গোছানো রাস্তা!

গুগলে সহজ ‘রিভার্স ইমেজ সার্চ’ করেই দেখা যায়, শ্রীনগরের বুলেভার্ড রোড বলে যেটিকে চালানো হচ্ছে সেই একই ছবি ‘ঝাউতলা, পটুয়াখালী’ নামে একটি ফেসবুক পেইজ থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই আপলোড করা হয়েছিল।

ওই পেজের একাধিক সদস্য পটুয়াখালী শহরের ওই রাস্তাটির ছবি দিয়েছেন। মহম্মদ নাঈম ইসলাম নামে একজন সদস্য তার ‘প্রাণের শহর’ পটুয়াখালীর একটি রাস্তার যে ভিডিও দিয়েছেন তা থেকেও বুঝতে অসুবিধা হয়নি কাশ্মির প্রশাসনও সেই একই রাস্তার ছবি দিয়েছে– কিন্তু সেটাকে দাবি করা হয়েছে শ্রীনগরের বুলেভার্ড রোড বলে!

এই লজ্জাজনক ভুল প্রকাশ্যে আসার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জম্মু ও কাশ্মির প্রশাসন ও বাডগাম জেলার জনসংযোগ বিভাগ– উভয়েই তাদের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে সেই পোস্টটি ডিলিট করে দেন। তবে ভুল ছবি পোস্ট করার জন্য তারা আদৌ দুঃখ প্রকাশ করেননি।

আকিব মীর-সহ ব্লু টিকধারী বেশ কয়েকজন সুপরিচিত টুইটার ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টে সেই পোস্ট কিন্তু এখনও (এই প্রতিবেদন লেখার সময়েও) রয়ে গেছে। কাশ্মিরের ‘বিজ্ঞাপন’ হিসেবে তাদের অ্যাকাউন্টে জ্বলজ্বল করছে পটুয়াখালীর একটি অখ্যাত রাস্তা!

ঘটনাচক্রে শ্রীনগরে জি-টোয়েন্টির পর্যটন ওয়ার্কিং গ্রুপের চলমান বৈঠকে বাংলাদেশও কিন্তু অংশ নিচ্ছে।

জোটের সদস্য কুড়িটি দেশের মধ্যে চীন, সৌদি ও তুরস্ক কেবল প্রতিনিধি পাঠায়নি, আর সাতটি বিশেষ আমন্ত্রিত দেশের মধ্যে (যার মধ্যে বাংলাদেশও আছে) কেবল মিশর এই বৈঠক এড়িয়ে গিয়েছে। গতকাল (সোমবার) থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের এই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন।

আর সেই বাংলাদেশের ছবি নিজেদের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করে অতিথির সামনেই চরম বেইজ্জতির মুখে পড়েছে কাশ্মির প্রশাসন!