মিজানুর রহমান, জবিপ্রতিনিধি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে সদরঘাটস্থ গ্রেটওয়াল শপিংসেন্টারে পুঁথিনিলয় প্রকাশনীর উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ কর্নার চালু হয়েছে। আর এই মহৎ উদ্যোগটি গ্রহণ করেছেন বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা পুঁথিনিলয়।
গ্রেটওয়াল শপিং সেন্টারের ১৪ তলার পুরোটাজুড়েই পুঁথিনিলয়। পুঁথিনিলয়ের কার্যালয়ের সামনেই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। কর্ণার এ গিয়ে দেখা যায়, হাজার স্কয়ার ফিটের ঘরের মাঝখানে গাঁদাফুলের পাঁপড়ি দিয়ে আলপনা আঁকা। ঘরের ঝলমলে আলোয় আলোকিত হয়েছে ওই ঘরের চার দেয়ালের ভেতরে থাকা প্রায় দেড়শ ছবি দিয়ে সাজানো পুঁথিনিলয়ের ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’।
কর্নারের পুরোটা ঘুরে দেখা গেল এক সুন্দরের সমাহার। বিশেষ করে বেসরকারি কোনো প্রকাশনা সংস্থা এই প্রথম নিজের টাকা খরচ করে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কর্নার করে গভীর ভালোবাসার নিদর্শন প্রকাশ করেছে। এসব ছবি এমন ভাবে সাজানো যেন, যে কেউ ঘরের চারদিকে একটু ভালো ভাবে চোখ ফেরালেই জানতে পারবেন ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিশুদ্ধ ইতিহাস। এসব ছবির বেশ কিছু ছবি আছে যেগুলো হাতে আঁকা।
কর্ণারের বামপাশ থেকে প্রথমেই ভাষা আন্দোলনে শহীদদের ছবি। এসব ছবির কয়েকটি হাতে আকার্ঁনো। তারপরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানীর ছবি রয়েছে। এরপরেই সেক্টর কমান্ডারদের ছবি। তবে এই সারিতে জিয়াউর রহমানের ছবি স্থান পায়নি। তারপরে বঙ্গবন্ধুর ছাত্র ও যুবক বয়সের ছবি রয়েছে। প্রভাতফেরিতে বঙ্গবন্ধু, মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে। পল্লীকবি জসীমউদদীনের কাঁধে হাত রেখে বসে থাকা বঙ্গবন্ধু ছবিও এখানে স্থান পেয়েছে। এরপরেই বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু। রয়েছে বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারের ছবি। সাত বীরশ্রেষ্ঠ’র ছবিও রয়েছে। রয়েছে মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের ছবি, মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশত্যাগী শরণার্থীদের ছবিও রাখা হয়েছে এই কর্নারে। শিল্পী-সাহিত্যিকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ ছবি, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশেকে সমর্থন দেয়া বিদেশি বন্ধুদের ছবি। আর এসব ছবির নিচেই সুন্দর সুন্দর নিজস্ব ক্যাপশন।
এমন উদ্যোগ নেয়ার কারণ হিসেবে ‘পুঁথি নিলয় এর স্বত্বাধিকারী ড. শ্যামল পাল বলেন, যখন ছাত্র ছিলাম তখন দেশের জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি। যখন আমরা বেড়ে উঠেছিলাম তখন ইতিহাস ছিল বিকৃত। নতুন প্রজন্ম যেন এসব বিকৃত ইতিহাসের পরিবর্তে বিশুদ্ধ ইতিহাস জেনে বেড়ে উঠে তাই এ উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে একসঙ্গে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ছবি অনেক বইয়ের চেয়েও বেশি কথা বলবে। অনেকে বই পড়েও বহু বিষয় মনে রাখতে পারেন না। কিন্তু ছবি দেখে অনেকের স্মৃতিই তরতাজা হয়ে উঠবে। ছবি দেখে সহজেই জানা যাবে মুক্তিযুদ্ধে কার কি অবদান। আর নতুন প্রজন্মকে সেই অবদান জানানোর জন্যই এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি আমি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের সব ছবির পটভূমি জানলে বাংলাদেশের পরিপূর্ণ ইতিহাস জানা যায়। স্বাধীনতাবিরোধীরা জাতির পিতার স্মৃতিকে জনগণের হৃদয় থেকে চিরতরে মুছে ফেলতে অনেক অপপ্রচার চালিয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবন ও তার দুর্লভ ছবিগুলোর মাধ্যমে তিনি জনগণের মাঝে জীবন্ত হয়ে থাকবেন চিরকাল। তিনি বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের প্রতিটি স্কুল ও কলেজে এমন কর্ণার করা হোক। এমন কর্ণার করা হলে দেশের নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বড় হবে। আর এটা আমার একা পক্ষেও সম্ভব নয়। তবে যেহেতু আমার কাছে এসব আছে, খুব কম খরচে এটা দিতে পারব।
পুঁথিনিলয়ের ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ’ কর্ণাটি প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য খোলা থাকে।