শনিবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং, রাত ৪:৩০
শিরোনাম :
সপ্তাহে ৬ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে : শিক্ষা মন্ত্রণালয় এপ্রিল মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই আরেকবার ভুল করলে ইসরায়েলের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না: ইরান ২ মাসের মধ্যে বেনজীরের দুর্নীতির প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ তাপমাত্রা আরও বাড়বে, গরম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের পদত্যাগ বান্দরবানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলি, কেএনএফ সদস্য নিহত সনদ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী গ্রেপ্তার সারাদেশে ১০ দিনে পাঁচ লাখ গাছ লাগাবে ছাত্রলীগ ইসরায়েল, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রে বিল পাস

আজ কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন

ডেক্সরিপোর্ট  আধুনিক বাংলা সংস্কৃতি জগতের একটি বিরল প্রতিভা সত্যজিৎ রায়। চলচ্চিত্র পরিচালনায় তাঁর অসাধারণ নৈপুণ্য এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বাংলা চলচ্চিত্রে একটি নতুন মাত্রা তৈরি করেছিল। হয়ত এটা বললে ভুল হবে না যে শুধুমাত্র সত্যজিৎ রায়ের কারণেই আজ বাংলা ভাষায় তৈরি চলচ্চিত্র পৃথিবী জুড়ে সম্মানের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।

অনেকেই বলেন সত্যজিৎ রায় তাঁর ছবির মাধ্যমে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছিলেন। তাইতো সত্যজিৎ রায় উপমহাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার হিসেবে গেঁথে আছেন সংস্কৃতিপ্রেমীদের অন্তর গহিনে। তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা।

আজ ২ মে, বাংলা চলচ্চিত্রের এই মহান প্রবাদপুরুষের জন্মদিন। ১৯২১ সালের এই বিশেষ দিনে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ক্ষণজন্মা এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। তার ডাক নাম মাণিক। সত্যজিতের পিতামহ ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (লেখক, চিত্রকর, ভারতীয় মুদ্রণশিল্পের পথিকৃৎ)। সত্যজিতের বাবা ছিলেন প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী। মায়ের নাম সুপ্রভা দেবী। তাদের আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশে।

প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেন সত্যজিৎ রায়। কর্মজীবনে কলকাতায় ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমারে জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে নিজেই চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং একের পর এক নির্মাণ করেন কালজয়ী সব চলচ্চিত্র।

চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে তিনি ছিলেন বহুমুখী। তার কাজের পরিমাণ বিপুল। তিনি ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী (১৯৫৫) ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে। এর মধ্যে অন্যতম ১৯৫৬ কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘শ্রেষ্ঠ মানব দলিল’ পুরস্কার। ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’(১৯৫৬) ও ‘অপুর সংসার’(১৯৫৯)- এই তিনটি একত্রে অপু ত্রয়ী নামে পরিচিত এবং এই চলচ্চিত্র সত্যজিতের জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম হিসেবে স্বীকৃত। সত্যজিতের অমর সৃষ্টি ‘ফেলুদা’ তাঁর সৃষ্টিশীলতার স্বাক্ষর বয়ে চলছে যুগ থেকে যুগান্তরে।

চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি ছিলেন একাধারে কল্পকাহিনী লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক। বর্ণময় কর্মজীবনে তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

তিনিই দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যাকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। প্রথম চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে অক্সফোর্ডের ডিলিট পেয়েছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের সরকার সত্যজিৎ সেদেশের বিশেষ সম্মানসূচক পুরস্কার লেজিওঁ দনরে ভূষিত করে। ১৯৮৫ সালে পান ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। এ ছাড়াও অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন তিনি, যার মধ্যে রয়েছে অস্কার লাভ, যা তার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে গণ্য হয়।

১৯৮৩ সালে ঘরে বাইরে ছবির কাজ করার সময় সত্যজিৎ রায়ের হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর থেকে তার কাজের গতি ধীর হতে থাকে। ১৯৯২ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সত্যজিৎ রায় হাসপাতালে ভর্তি হন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের বেডে কাটে তার জীবনের শেষ দিনগুলো। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল এই মহান চলচ্চিত্রকার মৃত্যুবরণ করেন।