শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ ইং, দুপুর ১২:০৮
শিরোনাম :
সপ্তাহে ৬ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে : শিক্ষা মন্ত্রণালয় এপ্রিল মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই আরেকবার ভুল করলে ইসরায়েলের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না: ইরান ২ মাসের মধ্যে বেনজীরের দুর্নীতির প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ তাপমাত্রা আরও বাড়বে, গরম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই ব্যর্থতা কাঁধে নিয়ে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা প্রধানের পদত্যাগ বান্দরবানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলি, কেএনএফ সদস্য নিহত সনদ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী গ্রেপ্তার সারাদেশে ১০ দিনে পাঁচ লাখ গাছ লাগাবে ছাত্রলীগ ইসরায়েল, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রে বিল পাস

আবদুল মালেককের অগাধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

ডেক্সরিপোর্ট  স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোটিপতি গাড়িচালক আবদুল মালেক ওরফে বাদল এখন বহুল আলোচিত চরিত্র। পেশায় একজন গাড়িচালক হয়েও তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ঢাকায় অন্তত ১০টা প্লট-ফ্ল্যাটের মালিক এই ব্যক্তি।

আবদুল মালেককে গ্রেফতারের পর তার অগাধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

একজন গাড়িচালকের দুর্নীতির মাধ্যমে গড়া বিশাল সম্পদের ফিরিস্তি দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা রীতিমতো হতবাক হয়েছেন।

এই মালেকের উত্থানটাও চোখে পড়ার মতো। তিনি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে যোগ দেন ১৯৮৬ সালে। তবে তার উত্থান স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক শাহ মুনীর হোসেনের সময়। চার বছর মালেক সাবেক এই মহাপরিচালকের গাড়ি চালিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য দিয়েছে। শাহ মুনীর হোসেনের নামে অনিয়ম–দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। তার নিজস্ব প্যাথলজি ল্যাবগুলো নিয়ম মেনে চলছিল না। অধিদফতরের বিভিন্ন কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। আবদুল মালেক এ সব কিছুরই সাক্ষী ছিলেন। সে কারণে শাহ মুনীর হোসেন তার ব্যাপারে শক্ত হতে পারেননি।

র‌্যাবের অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাহ মুনীর হোসেন স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক পদে থাকার সময় ২০০৯ সালের ১৮ জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত আবদুল মালেক স্বাস্থ্য সহকারী পদে শতাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে একটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, আবদুল মালেক ছিলেন শাহ মুনীরের ‘কালেক্টর’।

আবদুল মালেক পরে ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি জোট গঠন করে সেটির সভাপতি হন। প্রায় ১০ বছর ধরে আবদুল মালেক সিন্ডিকেট করে অধিদফতরে প্রভাব বিস্তার করলেও কেউ তার বিরুদ্ধে টু শব্দটি পর্যন্ত করেননি।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাহ মুনীর হোসেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, নিয়োগ, বদলি তার কথায় হতো না। আর গাড়িচালক মালেক যে অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন, সে সম্পর্কে তিনি জানতেন না।

র‌্যাব জানায়, রাজধানীর তুরাগ থানার কামারপাড়ার সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল এই মালেক।

তার দাপটে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। অনুসন্ধানে তার আয়-ব্যয়ের সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান ও সম্পদের বিস্তর অসামঞ্জস্য উঠে এসেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মালেকের ঢাকায় অন্তত চারটি ফ্ল্যাট, ১০টি প্লট, কামারপাড়ায় এক বিঘা জমি, বামনেরটেক এলাকায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর সাততলা বাড়ি (বাড়ি নং ৪২ হাজী কমপ্লেক্স), স্ত্রীর নামে একটি সাততলা বাড়ি, হাতিরপুল এলাকায় নির্মাণাধীন ১০ তলা বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে।

এ ছাড়া গবাদিপশুর বৃহৎ খামার, মাছের ঘের ও পরিবহন ব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি। হাতিরপুল ইস্টার্ন প্লাজা মার্কেটের পেছনে নির্মাণাধীন মালেকের ১০ তলা বাণিজ্যিক কাম আবাসিক ভবন।

এটি দেখাশোনা করেন তার ছোট ভাই আবদুল খালেক। খালেক অধিদফতরের পার শাখার পিয়ন হিসেবে কর্মরত। মালেকের বহু সম্পদ খালেকের স্ত্রীর নামে রয়েছে।

এখন পর্যন্ত চারটি বেসরকারি ব্যাংকে মালেকের নামে-বেনামে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব টাকা তার স্ত্রী, ভাই খালেক ও এক ভাতিজাসহ বেশ কয়েকজন আত্মীয়ের নামে রাখা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী গাড়িচালক মালেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি।

ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তার একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। জালটাকার ব্যবসা ছাড়াও এলাকায় চাঁদাবাজিতে জড়িত মালেক।

একজন গাড়িচালক হয়েও মালেক পাজেরো জিপ ব্যবহার করেন। তার রয়েছে তেল চুরির সিন্ডিকেট। স্বাস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালকরা তেল চুরি করলে তার একটি অংশ মালেককে দিতে হয়। একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালেক স্বাস্থ্য অধিদফতর নিয়ন্ত্রণ করেন।

রোববার ভোরে রাজধানীর তুরাগ থেকে মালেককে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ টাকার জালনোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।